আম গাছের হরমোন
আম গাছের হরমোন মূলত হলো প্যাকলোবিউট্রাজল উপাদান সমৃদ্ধ জিদ্ভিদ নিয়ন্ত্রক (PGR) . আম গাছের ফলন বাড়ানো ও সময়োপযোগী ফলন নিশ্চিত করার জন্য প্যাকলোবিউট্রাজল (Paclobutrazol) ব্যবহার আজকাল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি একটি প্লান্ট গ্রোথ নিয়ন্ত্রক বা PGR, যা আম গাছের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফুল ধরার হার বাড়িয়ে ফসল বৃদ্ধি করে। নিচে আম গাছে প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহারের প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হলো। বাংলাদেশের বাজারে প্যাকলোবিউট্রাজল বিভিন্ন নামে পাওয়া যাই সে গুলো হলোঃ র্যাপিড ২৫ এসসি , ফুলকলি ২৫ এসসি , সায়ন ২৫ এসসি , কালটার ২৫ এসসি, অলটার ২৫ এসসি , ক্রুজ ২৫ এসসি , শেলটার ২৫ এসসি ইত্যাদি।
আম গাছে হরমোন প্রয়োগ করলে কী হয় ?
আম আছে যখন এই হরমোন প্রয়োগ করা পর আম গাছের জিব্বেরেলিন ( gibberellins ) নামক হরমোন উৎপাদন তৈরি কম হয়ে যাই। এই জিব্বেরেলিন হরমোন উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, উদ্ভিদ এই হরমোন উৎপাদন বেশি করলে উদ্ভিদ দ্রুত বেড়ে ওঠে অতিরিক্ত বৃদ্ধি অনেক সময় কম ফলন দেই। আর যখন আম গাছে এই হরমোন বা প্যাকলোবিউট্রাজল গাছে প্রয়োগ করা হয় তখন আম গাছের ডালপালা ও পাতার বৃদ্ধি কমে যায় এবং শেকড় বৃদ্ধি, গাছ খাটো ও ঘন হয়। এতে গাছের শক্তি ও ফুল এবং ফলে সঞ্চিত হয়, ফলে আম গাছে দ্রুত ফুল আসে ও ফলন বাড়ে। তবে বেশি ব্যবহার করলে গাছের বৃদ্ধি একদম বন্ধ হতে পারে ।
কেন আম গাছে হরমোন প্রয়োগ করবেন ?
আপনি যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন আম গাছ সাধারণত ১ বছরে ভালো ফল আসে কিন্তু তার পরের বছর অনেক কম ফল আসে । অধিকাংশ আম গাছ এইরকম ফলন দিয়ে থাকে । কিন্তু এইসব আম গাছে যদি হরমোন প্রয়োগ করা হলে আম গাছ বাৎসরিক মুকুল না আসার-প্রবণতা হারিয়ে থেমে যাই। তাই এই হরমোন প্রয়োগে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে মুকুল আসে এবং এই মুকুল থেকে প্রচুর পরিমাণে ফল হয়, এতে চাষিরা অনেক হারে লাভবান হয় এবং গাছের ক্ষেত্রে তেমন কোনো খারাপ প্রভাব পড়তে দেখা যাই না । অনেক ক্ষেত্রে এই হরমোন প্রয়োগকৃত আমগাছ গুলির আয়ু বৃদ্ধি হয় এবং আম গাছের প্রতিকূল পরিবেশের অভিজোজন ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ব্যবহারের কিছু উপকারী পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- আম গাছকে অতিরিক্ত লম্বা হওয়া নিয়ন্ত্রণ: আমের হরমোন বা প্যাকলোবিউট্রাজল গাছের অতিরিক্ত লম্বা বৃদ্ধি রোধ করে গাছকে কম্প্যাক্ট ও শক্তিশালী রাখে।
- আমের বাৎসরিক মুকুলের রেস্ট ভাঙন: এটি প্রয়োগে আম গাছ যে প্রতি ১ বছর পরপর ফলন বেশি ও কম দেই এটা ঠিক হয়ে যাবে এবং প্রতি বছরে প্রচুর মুকুল, কুশি আনবে।
- নতুন কাণ্ড ও ডগা সৃষ্টি: এটি প্রয়োগে আম গাছের প্রচুর পরিমাণে নতুন কাণ্ডের সৃষ্টি হয়।
- ফুলের গঠন বৃদ্ধি: নতুন তৈরিকৃত কাণ্ড ও ডগা থেকে আম গাছে ফুল ধরার হার বাড়ায়, ফলে ফলন বৃদ্ধি পায়।
- সময়মতো ফলন নিশ্চিত: গাছের মুকুলের সময় ও ফল ওঠার সময়কে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে, যাতে বাজার প্রবণতার সাথে মিল রেখে আম তুলতে পারেন।
- গাছের রোগ প্রতিরোধ ও ছত্রাকের আক্রমণ কমায়।
- গাছের শেকর বৃদ্ধি ও ফলের গুণগত মান উন্নত: এটি প্রয়োগে আম গাছের শিকড় বৃদ্ধি হয় তাই গাছ মাটি থেকে প্রচুর পানি পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে এতে ফল বৃদ্ধি, মিষ্টি ও টেক্সচার ভালো হয় এবং ভিটামিন সি’র মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।
- ফসলের পরিমাণ বৃদ্ধি: ফল ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে ফসলের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায়।
আম গাছে হরমোন প্রয়োগের সময় ?
আম গাছে চাইলেই যে কোনো সময় হরমোন ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া যাই না। এই জন্য কিছু নির্দিষ্ট সময় আছে । প্রধানত আম গাছ থেকে আম নির্দিষ্ট করার ঠিক ৬০-৯৫ দিনের ভিতর অথবা জুলাই থেকে আগস্ট মাসের ভিতর। এই হরমোন সমস্ত বয়সের আম গাছে এটি প্রয়োগ করতে নাই। প্রধানত আম চারা রোপণের ২ বছরের ভিতর এই হরমোন প্রয়োগ করা খুবি ঝুকিপূর্ণ, ওই অল্প বয়সে প্রয়োগ করলে আম গাছ মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই ৩ বছরের উপরের গাছে নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী প্রয়োগ করলে খুবি ভালো ফলন পাওয়া যাই । এই সকল হরমোন গুলির প্রয়োগ মাত্রা ভিন্ন বয়সের আম গাছের জন্য ভিন্ন হয় এই সব নিয়ে নিয়ে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
আম গাছে হরমোন প্রয়োগের পদ্ধতি
আম গাছে হরমোন প্রয়োগের জন্য প্রতি গাছ প্রতি নিদিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী হরমোন পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়া থেকে মিনিমাম ৪ - ৬ ফিট দূরে গোলাকার গর্থ করে তার ভিতর হরমোন মেশানো পানি ঢালতে হবে, পানি ঢেলে গর্থতে প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হবে যাতে এই সাদা রঙ্গের হরমোনটা সম্পূর্ণ মাটির নিচে যাই । মনে রাখবেন আম গাছের একদম গোড়ায় এই হরমোন প্রয়োগ করবেন না!
- সঠিক মাত্রায় আম গাছে প্রয়োগ করবেন।
- গাছ থেকে মিনিমাম ৫-৬ ফিট দূরে গর্থ করে এই ভিতর হরমোন প্রয়োগ করবেন।
- প্রয়োগের পর নিশ্চয় এই গর্থে হরমোন মেশানো পানি প্রচুর ঢালবেন।
- একদম গাছের গাছের গোড়ায় হরমোন প্রয়োগ করবেন না।
![]()
হরমোন ব্যবহারের কিছু ক্ষতিকর দিক !
অনেক চাষিরা চান যে তাদের নতুন রোপণ কৃত আমগাছ গুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এই জন্য যে গরু, ছাগল ও অন্যান্য গবাদিপশু থেকে গাছ গুলি রক্ষা পাই, এই ক্ষেত্রে এই হরমোন প্রয়োগ করলে আম গাছ কিন্তু দ্রুত বৃদ্ধি হবে না। যা একটি অসুবিধার কারণ হতে পারে।
আম গাছে হরমোন প্রয়োগ করার পর তার আশেপাশে অন্য সাথী ফসল চাষ করলে তাদের বৃদ্ধি কিন্তু অনেকটাই থেমে যাবে। অনেক চাষিরা আম গাছ কেটে অন্য ফসল রোপণ করতে চান সে ক্ষেতে নতুন রোপণ করা ফসলের বৃদ্ধি ঠিক মতো হবে না।
একটি আম গাছে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন প্রয়োগ করলে গাছটি বন্ধ হয়ে মারা যেত পারে । তাই একটি নিদ্রিস্ট মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করুন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
- প্যাকলোবিউট্রাজল ব্যবহারের পর মাঠে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া আবশ্যক।
- গাছের বয়স ও আকার অনুযায়ী সঠিক ডোজ বেছে নিন।
- খুব বেশি প্রয়োগ করলে গাছের ক্ষতি হতে পারে, তাই নির্ধারিত মাত্রা মেনে চলুন।
- আম গাছে প্যাকলোবিউট্রাজল প্রয়োগের ঠিক ৩ মাস পর্যন্ত মুকুল ও ফলের জন্য অপেক্ষা করা লাগতে পারে।
- গাছের একদম গোড়ায় এই হরমোন প্রয়োগ করবেন না।
শেষ কথা
আম গাছের উন্নত ও সময়মতো ফুল ও ফল নিশ্চিত করতে আমার হরমোন প্যাকলোবিউট্রাজল একটি শক্তিশালী উপকরণ। এই হরমোন শুধু-মাত্র যে আম গাছেই প্রয়োগ করা যাই তা নয় এটি বিভিন্ন ফল ও সবজি গাছ যেমনঃ পেয়ারা, পটল, মাস কলাই, আঙুর ইত্যাদি গাছে প্রয়োগে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যাই। এটি আম গাছের দৈর্ঘ্য নিয়ন্ত্রণ, ফুল উৎপাদন বাড়ানো, ফলের গুণগত মান উন্নতি এবং আম চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যাই । সঠিক সময়ে আম গাছে হরমোন প্রয়োগে আপনার আম গাছ থেকে পাবেন অধিক ভালো ফলন ও বাজারে দামের সুবিধা।
সাহায্য (HELP)
আপনার যদি এই আম গাছে হরমোন বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহল কমেন্ট বক্সে জানান…