ধানের জমিতে ইঁদুর দমনের কীটনাশক ঔষধ
ধান চাষে ইঁদুর একটি ভয়াবহ সমস্যা। ইঁদুর ফসল কেটে খায়, জমিতে গর্ত করে গাছের গোড়া নষ্ট করে দেয় এবং ফলন মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। তাই সময়মতো ইঁদুর দমন করা না গেলে কৃষকের বড় ক্ষতি হয়। এই সমস্যা সমাধানে বর্তমানে বাজারে কিছু কার্যকর ইঁদুর দমনের ওষধ পাওয়া যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৩ টি ওষধ এগুলি হলো: থিমিড ও সেমকাপ অথবা ফরচুনেট কীটনাশক এবং র্যাটোনিল নিচে এই ওষধ গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
থিমিড
থিমিড (Thimid): ধানক্ষেতে স্প্রে স্প্রে দিলে ধানের নলিমাছি শোষক পোকা যেমনঃ কারেন্ট পোকা, পামরি পোকা ও গান্ধী পোকা সহ বিভিন্ন পোকা দমন হয় ও ছত্রাক ঘটিত রোগ প্রতিরোধ ও দমন করা এবং এটি ইঁদুর ও বাবুই পাখি বই পাখি থেকে ধানকে রক্ষা করে।
থিমিড হলো একটি অনন্য ইঁদুরনাশক স্প্রে, যা সরাসরি ধানের জমিতে স্প্রে করে ব্যবহার করা হয়।
এই ওষধে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে
- ইমিডাক্লোপ্রিড (Imidacloprid): একটি শক্তিশালী শোষক কীটনাশক, যা ধানের শোষক পোকার কারেন্ট পোকা, নলিমাছি, পামরি পোকা, গান্ধী পোকা) দমন করে।
- থিরাম (Thiram): একটি স্পর্শক ছত্রাকনাশক, যা ধানের গাছকে ছত্রাকজনিত রোগ থেকে রক্ষা করে।
- ইঁদুরনাশক বিষ: এর ভিতরে লুকানো কিছু উপাদান আছে যা ক্ষতিকর পোকা মাকড় যেমনঃ ইঁদুরক ও বাবুই পখির আক্রমণ থেকে ধান ফসলে রক্ষা করে।
অর্থাৎ থিমিড শুধু ইঁদুর দমনই করে না, একই সঙ্গে ধানের শোষক পোকার আক্রমণ ও ছত্রাকজনিত রোগ ও প্রতিরোধ করে এছাড়াও এটি বিষ শোধন ও বিজ কি পোকামাকড় থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা যাই।

থিমিড ব্যবহারের নিয়ম
- প্রতি লিটার পানিতে থিমিডের ২ - ৩ মিলি মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করুন এবং প্রথম স্প্রের ১০ দিন পর পুনরায় স্প্রে দিতে হবে।
- সম্পূর্ণ জমিতে সমানভাবে স্প্রে দিন, বিশেষ করে জমির আল ও যেখানে ইঁদুরের গর্ত দেখা যায়।
- প্রয়োগের সময় বৃষ্টি যেন না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে।
- নিয়মিত ধান ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে।
সেমকাপ অথবা ফরচুনেট কীটনাশক
সেমকাপ: সেমকাপ এর মূল উপাদান হলো ফেনথয়েট এটি মূলত খুবি দূর্ঘন্ধ যুক্ত কীটনাশক এটা ফসলের চোষক পোকা দমনে ব্যবহার হলেও এটিকে সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে ইঁদুর তড়ানো যাই। যখন সেমকাপ ৫০ ইসি ধানের জমিতে স্প্রে করা হয়, তখন এর গন্ধ জমির চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এই গন্ধ ইঁদুরের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর। ফলে ইঁদুর জমি ছেড়ে আশপাশের এলাকা ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। অর্থাৎ এটি সরাসরি ইঁদুর মারে না, বরং ইঁদুরকে তাড়িয়ে জমি সুরক্ষিত রাখে।
- এটি নলিমাছি, পামরি পোকা, ফড়িং,জাব পোকা দমন করতে পারে।
- এটি প্রচন্ড গুন্ধ তাই এই গন্ধ ইঁদুর সয্য না পেরে পালিয়ে যাই।
ফরচুনেট: ফরচুনেট ৭৫ এসপি এর মূল উপাদান হলো অ্যাসিফেট যা ধানের মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও শোষক পোকা দমন করে এছাড়াও ফরচুনেট খুব গন্ধ কীটনাশক তাই এটি ইঁদুর তাড়াতে কার্যকর।
- ধানের মাজরা, পাতা মোড়ানো পোকা, ফড়িং, নলিমাছি, পামরি পোকা, ফড়িং,জাব পোকা দমন করতে পারে।
- এটি প্রচন্ড গুন্ধ তাই এই গন্ধ ইঁদুর সয্য করতে না পেরে পালিয়ে যাই।
সেমকাপ অথবা ফরচুনেট ব্যবহারের নিয়ম
- সেমকাপ প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ মিলি মিশিয়ে ধান ক্ষেতের জমিতে স্প্রে দিতে হবে।
- ফরচুনেট প্রতি লিটার পানির জন্য ২ গ্রাম মিশিয়ে ধান ক্ষেতের জমিতে স্প্রে দিতে হবে।
- স্প্রের সময় জমির আল বা কিনারায় টার্গেট করে বেশিক্ষণ সময় ধরে মাত্রা বেশি করে স্প্রে দিতে হবে। কারণ জমির আল স্থান হলো ইঁদুরের প্রধান আশ্রয় স্থল।
- সমস্ত ধান ক্ষেত ভিজিয়ে স্প্রে দিতে হবে।
- প্রয়োগের সময় বৃষ্টি যেন না হয় সেটা লক্ষ রাখতে হবে।
- নিয়মিত ধান ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে।

বিষ যুক্ত টোপ যেমনঃ র্যাটোনিল (বিষযুক্ত গম)
র্যাটোনিল হলো একটি অত্যন্ত কার্যকরী ইঁদুর নাশক টোপ। এর ভিতরে আছে বিষ মিশ্রিত গম এই বিষটির নাম হলো ব্রোমাডিওলোন যা ইঁদুরের শরীরে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া ঘটায় এতে ইদুরকে ১০০% কার্যকরভাবে মৃত্যুর করে।
ব্যবহারের নিয়ম:
- প্রতিটি সক্রিয় ইঁদুরের গর্তে বা চলাচলের এই বিষ যুক্ত গম বা (র্যাটোনিল) টোপ রাখুন।
- সন্ধ্যা বেলায় প্রয়োগ করুন, কারণ রাতে ইঁদুর সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।
- প্রয়োগের পর গর্তগুলো ২–৩ দিন পর্যবেক্ষণ করুন।

সতর্কতা:
- প্রয়োগের সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন।
- টোপ শিশু ও গবাদি পশুর নাগালের বাইরে রাখুন।
- ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
ধান জমিতে ইঁদুর দমনের অতিরিক্ত টিপস
জমির চারপাশ পরিষ্কার রাখুন, যাতে ইঁদুর লুকানোর জায়গা না পায়। একসাথে কয়েকটি জায়গায় টোপ দিন, এতে ইঁদুরের সংখ্যা দ্রুত কমবে। প্রয়োগের পর মৃত ইঁদুর মাটিতে পুঁতে ফেলুন। সর্বচ্চ ফলাফলের জন্য ২ ধরনের ইঁদুরনাশক একসাথে ব্যবহার ভালো ফলাফল পাওয়া যাই।