ভুট্টার কাটুই পোকা দমন: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও কার্যকর কীটনাশক ব্যবহারের নির্দেশিকা
🐛 কাটুই পোকার পরিচিতি
ভুট্টা চাষে সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকাগুলোর একটি হলো কাটুই পোকা (Cutworm) । এরা সাধারণত রাতে সক্রিয় থাকে এবং মাটির নিচে বা গোড়ার কাছে কচি গাছ কেটে ফেলে দেয়। এতে গাছ শুকিয়ে যায় বা মারা যায়, ফলে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
🌱 কাটুই পোকার আক্রমণের সময়
কাটুই পোকা সাধারণত চারা গজানোর ৫ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আক্রমণ করে। এই সময় গাছের কান্ড কোমল থাকে বলে পোকা সহজেই কেটে ফেলতে পারে।

🔍 আক্রমণের লক্ষণ
- চারা বা কচি গাছ গোড়া থেকে কাটা অবস্থায় পড়ে থাকে।
- মাটির নিচে বা গোড়ার কাছে মোটা ও ধূসর রঙের পোকা দেখা যায়।
- মাঠে জায়গায় জায়গায় ফাঁকা হয়ে যায়।
- রাতে গাছের কান্ড কেটে খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
![]()
🐛 কাটুই পোকা আক্রমণ শনাক্তকরণ
- ✅ প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে ফসলের জমি পর্যবেক্ষণ করুন।
- ✅ চারা গজানোর পর থেকে ২০ দিন পর্যন্ত নিয়মিতে ক্ষেত পরিদর্শন করুন।
- ✅ কাটা ভুট্টার গাছ দেখতে পেলেই প্রয়োজনীয় কীটনাশক অথবা জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করুন।

🛡️ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- ভুট্টা রোপনের জন্য চাষের পূর্বে জমিতে আগুন ধরিয়ে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা পোকা গুলো দমন করা যাই।
- ভালোভাবে চাষ দিয়ে মাটির নিচে থাকা পোকার লার্ভা ধ্বংস করুন।
- আক্রান্ত গাছের চারপাশে ছাই ছিটিয়ে দিলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায়।

💧 কাটুই পোকা দমনে কীটনাশক দ্বারা পোকা দমন
কাটুই পোকার আক্রমণ বেশি হলে ল্যামডা সাইহ্যালোথ্রিন (Lambda Cyhalothrin) যুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা সবচেয়ে কার্যকর ও অর্থ সাশ্রয়।
🧴 এই কীটনাশকের নাম:
- বক্সার ২.৫ ইসি ( এমিন্যান্স কেমিক্যাল)
- জাগুয়ার ২.৫ ইসি ( জিএমই এগ্রো)
- সুপার ল্যামডা ২.৫ ইসি (র্যাভেন এগ্রোভেট লিঃ)
- জুবাস ২.৫ ইসি (ইনতেফা)
- ল্যামিরন ২.৫ ইসি (সুইট এগ্রোভেট লিঃ)
- রিভা ২.৫ ইসি (অটো ক্রপ কেয়ার)
- ক্যারাটে ২.৫ ইসি (সিনজেনটা)
- ল্যামডেক্স ৫ ইসি (ক্লীন এগ্রো)
- ল্যামডা গ্রীন ২.৫ ইসি (গ্রীন বাংলা এগ্রোভেট লিঃ)
👉 এই কীটনাশক গুলি ছাড়াও সাইপারমেথ্রিন অথবা ক্লোরোপাইরিফস যুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলেও এই পোকা দমন হয় কিন্তু এই কীটনাশকের মূল্য কিছুটা বেশি।
🧴 সাইপারমেথ্রিন অথবা ক্লোরোপাইরিফস যুক্ত কীটনাশকের নাম
- নাইট্রো ৫০৫ ইসি (অটো ক্রপ কেয়ার)
- এসিমিক্স ৫৫ ইসি (এসিআই)
- জি ফাইভ ৫৫ ইসি (জিএমই এগ্রো)
- মর্টার ৪৮ ইসি ( ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার)
- সাইন ৫৫ ইসি (এ্যামকো এগ্রিকালচারাল ইন্ড্রাঃ)
- সার্টার ৫৫ ইসি (র্যাভেন এগ্রোঃ ক্যামিঃ লিঃ)
উল্লেখিত কীটনাশকের যে কোন একটা কিটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে ভুট্টার উপর বিকালে অথবা সন্ধ্যার সময় স্প্রে করতে হবে।
🧾 কীটনাশক ব্যবহারের নিয়ম
- 👉 প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি থেকে ১.৫ মিলি কীটনাশক মিশিয়ে ভালোভাবে ভুট্টা গাছ ও গাছের গোড়া ভিজিয়ে স্প্রে করুন।
- 👉 বিকাল বা সন্ধ্যার সময় স্প্রে করুন, কারণ এই সময় পোকা সবচেয়ে সক্রিয় থাকে এবং কার্যকারিতা বেশি হয়।
- 👉 প্রয়োজনে ৭–১০ দিন পর দ্বিতীয়বার স্প্রে দিন।
- 👉 স্প্রে করার সময় গ্লাভস, মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাক ব্যবহার করুন।
সাবধানতা:
- 👉 অতিরিক্ত মাত্রা কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে ফসলের উপর প্রয়োগ করবেন না।
- 👉 ল্যামডা সাইহ্যালোথ্রিন ব্যবহারে মানুষের ত্বকে লাগলে সামান্য জ্বালাপোড়া করে। তাই স্প্রে করার সময় গ্লাভস, মাস্ক ও সুরক্ষা পোশাক ব্যবহার করুন বাতাসের বিপদে দিয়ে স্প্রে করবেন না ।
🌾 উপসংহার
ভুট্টা ফসলে কাটুই পোকা সময়মতো দমন না করলে ফলনে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন, আগাছা দমন, এবং বিকেল বা সন্ধ্যায় ল্যামডা সাইহ্যালোথ্রিন যুক্ত কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে সহজেই এ পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই ব্লগ সম্পর্কে আপনার যদি কোন মন্তব্য থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টে জানান