কাজহবে ডটকম – কৃষি সমস্যার নির্ভরযোগ্য সমাধান

Press ESC to close

কলাকে আরো লম্বা মোটা, চকচকে, স্পট মুক্ত রাখার পদ্ধতি

কলা বড়ো ও মোটা করার পদ্ধতি, কল মোটা করণে যে সকল হরমোন, ভিটামিন ও সার প্রয়োগ করতে হয় 

কলা চাষের ক্ষেতে সঠিক সময়ে সঠিক মতো সার ও বালাইনাশক প্রয়োগ না করলে সঠিক ফলন পাওয়া যাই না, অনেক সময় কলার ফলন বাড়াতে বা আগামিতে নতুন করে অন্য চাষ করার জন্য জমি থেকে দ্রুত কলা উঠানোর প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতে যত দ্রুত সম্ভব কম সময়ের অনেকেই দ্রুত কলা মোটা তাজাকরণ পদ্ধতি খোজেন যাতে তারা তাদের জমির কলাগুলি খুব দ্রুত বাজারে বিক্রি জমি খালি করতে পারেন। 

কেন চাষিরা দ্রুত কলা মোটাতাজা করণের সিদ্ধান্ত নেয়?

বাংলাদেশেরর অধিকাংশ চাষিদের ভাগে চাষ যগ্য জমি কম, তাই চাষিরা চান যে একই জমিতে বছরে নূন্যতম ৩ টা চাষ করার। কিন্তু কলা চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রাই ১ বছর ১ মাস সময় লাগে। চাষিরা কলা চাষ করেন এই ভেবে যে তারা মাত্র ১ বছরের মধ্য কলা তুলে বাজারে বিক্রি করবেন কিন্তু এটা অনেকসময় সম্ভব হয় না। কলা দ্রুত জমি থেকে সংগ্রগের উদ্দেশ্য ও কলার বেশি ফলনের উদ্দেশ্য কলাকে মোটাতাজা করণ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এছাড়াও কল বড়ো ও মোটা হলে কলাকে অনেক সুন্ধর দেখাই এতে বিক্রির সময় অনেক দাম পাওয়া যাই। 

কলা মোটাতাজা করন পদ্ধতি 

কলাকে দুইটি পদ্ধতি অবলম্বন করে মোটাতাজা করণ করা যাই নিচে তা তুলে ধরা হলো 

  • হরমোন প্রয়োগ
  • পর্যাপ্ত সার ও দস্তা প্রয়োগ

হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে কলা মোটাতাজা করণ:

কলাকে দ্রুত মোটা করণের জন্য কলার মোচা কাটার ২৮ - ৩২ দিনের ভিতর (ক্রপস কেয়ার অথবা প্লানোফিক্স হরমোন) ও সাথে সামান্য পরিমানে জিব্বেরেলিক ১০% এসিড যেমনঃ পাওয়ার, জিএ৩, ইত্যাদি এবং স্প্রে চিলেটেড জিংক মিশিয়ে কলার ফলের উপর স্প্রে দিতে হবে। স্প্রেটা ২ ধাপে দিতে হবে। এই স্প্রে গুলি ৩০ দিনের সময় ও কলার ৪৫ দিন বয়সে স্প্রে দিতে হবে। নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলোঃ

  • ১ম ধাপের স্প্রেতে ক্রপস কেয়ার , চিলেটেড জিংক, জিব্বেরেলিক এসিড দিতে হবে তবে সঠিক মাত্রায় দিতে হবে।
  • ২য় ধাপের স্প্রেতে ক্রপস কেয়ার / প্লানোফিক্স ও সাথে চিলেটেড জিংক দিয়ে স্প্রে দিতে হবে।
  • কলা গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সালফার, পটাশিয়াম (SOP) ও মানসম্মত জিংক বা দস্তা দিন।
  • কলার ফলের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন শোষক পোকা যেমনঃ জাবপোকা, মশার উপদ্র হয় এতে কলা ফলের গায়ে কালো কালো দাগ হয়, এইজন্য শোষক পোকা দমনের কীটনাশক যেমনঃ ইমিটাফ , গেইন , অথবা বা জৈব বালাইনাশক স্প্রে দিন।
  • কলার ছত্রাকজনিত দাগ থেকে রক্ষার জন্য ম্যানকোজে + কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক মাসে ২ বার স্প্রে দিন।

ফসল

স্প্রে

প্রয়োজনীয় উপকরণ

মাত্রা

কলা মোটাতাজা করণ

১ম স্প্রে (কলার মোচা কাটার ২৮ - ৩০ দিনের ভিতর ১ ম স্প্রে করুন)

ক্রপস কেয়ার, চিলেটেড জিংক, জিব্বেরেলিক এসিড

ক্রপস কেয়ার হরমোন প্রতি ১ লিটার পানির জন্য ৪ মিলি, জিব্বেরেলিক এসিড প্রতি লিটার পানির জন্য ০.৩ গ্রাম, চিলেটেড জিংক ১ গ্রাম

 

২য় স্প্রে (কলার মোচা কাটার ৪০ - ৪২ দিনের ভিতর ২ ম স্প্রে করুন)

ক্রপস কেয়ার, চিলেটেড জিংক

ক্রপস কেয়ার প্রতি লিটার পানির জন্য ৫ মিলি, চিলেটেড জিংক ১.৫ গ্রাম

কলায়-ছত্রাকের-কারণে-দাগ--01

হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে কলা মোটাতাজা করণের সাবধানতা: 

হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে কলা মোটাতাজা করণের সময় অতিরিক্ত মাত্রায় জিব্বেরেলিক প্রয়োগ করা যাবে না। জিব্বেরেলিক এসিডের মাত্রা অনেক বেশি দিলে কলা অতিরিক্ত লম্বা ও চিকন হবে, এতে কলার সৌন্দর্য নষ্ট হবে এবং কলা কম মোটা হবে। এমনটি হলে অতিরিক্ত চিকন কলা বাজারে বিক্রি হয় না। 

  • ভুলেও অতিরিক্ত মাত্রায় জিব্বেরেলিক এসিড প্রয়োগ করবেন না। 

পর্যাপ্ত সার ও দস্তা প্রয়োগের মাধ্যমে কলা মোটাতাজাকরণ: 

কোনো হরমোন প্রয়োগ ছাড়াও কলা গাছকে পর্যাপ্ত সার বা পুষ্টি উপাদান সংগ্রহের মাধ্যমে কলাকে বেশ মোটা তাজা করা যাই। কলা মোটা করার যন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন হয় সালফার, পটাশিয়াম ও ফসফেট এবং এর সাথে জিংক। কলা গাছ রোপণের পর থেকেই গাছের শিকড় বৃদ্ধির জন্য প্রথম দিক থেকেই বেশি বেশি ফসফেট সার ও পটাশ সার দিতে হয়। কলা গাছে কলার মোচা বা ফুল আসলে গাছের গোড়ায় ১৫ দিন পরপর ৩ চাপান সার দিতে হবে এই সারের মধ্য পর্যাপ্ত সালফার, অল্প পরিমাণে ইউরিয়া, এবং পটাশ সার দিতে হয়, তবে কলা গাছের পটাশিয়াম ও সালফারের চাহিদা মেটানোর জন্য MOP সারের পরিবর্তে SOP সার ব্যবহার করা সব থেকে উত্তম। 

  • কলার রোপণের পর শেকড়ের বৃদ্ধির জন্য বেশি করে ফসফেট সার দিতে হবে। 
  • কলায় ফুল বা মুচা আসলে তার পর থেকে ৩ বার সার দিতে হবে। 
  • ১ ম চাপান সারের সময় হলো কলায় ফুল বা মোচ আসার পর থেকেই ইউরিয়া ১৫ কেজি, থিয়োভিট ২ কেজি, ভালো মানসম্মত জিংক বা দস্তা ২ কেজি, সলুবর বোরণ ৫০০ গ্রাম (৩৩ শতাংশ জমির জন্য)। 
  • ২ য় চাপান সার দেওয়ার টাইম হলো ১ চাপান সারের থেকে ১৫ দিন পর ২য় চাপান সার দিতে হবে এই সারে ডিএপি ১৫ কেজি, ইউরিয়া ১০ কেজি, ম্যাগনেশিয়াম সালফার ৫ কেজি। 
  • কলায় মোচ বা ফুল আসার ৫ দিন পর থেকেই কলা গাছে ও কলা ফলের গায়ে (কার্বেন্ডাজিম + ম্যানকোজেব) ছত্রাকনাশক যেমনঃ ম্যানসার, কেমামিক্স, কার্মিক্স ব্লু ১০ দিন পর পর স্প্রে দিতে হবে। এতে কলা ফলের ছত্রাকজনিত পচা কালো স্পট দূর হবে । কলা ফলকে শোষক পোকা যেমনঃ মশা, এফিড ও জাব পোকা কামড় থেকে রক্ষার জন্য ও কামড়ের কারণে স্পট দূরের জন্য এ্যাসিটাপ্রিমিড অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক স্প্রে দিতে হবে। যেমনঃ   গেইন ২০ এসএল , ইমিটাফ ২০ এসএল , চন্দ্রা ২০ এসপি , তুন্দ্রা ২০ এসপি ইত্যাদি 

প্রয়োগ মাত্রা:

ফসল

সার দেওয়ার ধাপ

সারের নাম

স্প্রে 

কলা মোটাতাজা করণ

১ চাপান (কলায় ফুল বা মোচ দেখলে দিতে হবে)

ইউরিয়া ১৫ কেজি, থিয়োভিট ২ কেজি, ভালো মানসম্মত জিংক বা দস্তা ২ কেজি, সলুবর বোরণ ৫০০ গ্রাম (৩৩ শতাংশ জমির জন্য)

কলায় মোচ বা ফুল আসার ৫ দিন পর কলা গাছে ও কলা ফলের গায়ে (কার্বেন্ডাজিম + ম্যানকোজেব) ছত্রাকনাশক যেমনঃ ম্যানসার, কেমামিক্স, কার্মিক্স ব্লু ১০ দিন পর পর স্প্রে দিতে হবে। এতে কলা ফলের ছত্রাকজনিত পচা কালো স্পট দূর হবে । কলা ফলকে শোষক পোকা যেমনঃ মশা, এফিড ও জাব পোকা কামড় থেকে রক্ষার জন্য ও কামড়ের কারণে স্পট দূরের জন্য এ্যাসিটাপ্রিমিড জাতীয় কীটনাশক স্প্রে দিতে হবে 

 

২ ধাপ (১ ম ধাপে সার দেওয়ার ১৫ দিন পর)

ডিএপি ১৫ কেজি, ইউরিয়া ১০ কেজি, ম্যাগনেশিয়াম সালফার ৫ কেজি, 

প্রতি ১০ দিন পর পর কলা গাছে ও কলা ফলের গায়ে (কার্বেন্ডাজিম + ম্যানকোজেব) ছত্রাকনাশক যেমনঃ ম্যানসার, কেমামিক্স, কার্মিক্স ব্লু ১০ স্পতাহ পর পর স্প্রে দিতে হবে। এতে কলা ফলের ছত্রাকজনিত পচা কালো স্পট দূর হবে । কলা ফলকে শোষক পোকা যেমনঃ মশা, এফিড ও জাব পোকা কামড় থেকে রক্ষার জন্য ও এই পোকার কামড়ের কারণে কালো স্পট দূরের জন্য এ্যাসিটাপ্রিমিড জাতীয় কীটনাশক স্প্রে দিতে হবে 

 

 

Related Posts

শীতকালীন ধানের বীজতলা পরিচর্যা পদ্ধতি: ঠান্ডা, কুয়াশা এবং অন্যান্য সমস্যার সহজ সমাধান
🌽 ভুট্টার লেদা পোকার আক্রমণ, লক্ষণ ও দমন পদ্ধতি
ভুট্টার কাটুই পোকা দমন: লক্ষণ, প্রতিরোধ ও কার্যকর কীটনাশক ব্যবহারের নির্দেশিকা
নারিকেল গাছের ভয়ঙ্কর শত্রু গন্ডার / গোবরে পোকা, এই পোকার সমগ্র পরিচয়, ক্ষয়ক্ষতি ও সমাধান
Rubai Hussain

হাই, এটা মোঃ রুবাই হোসেন আমি হলাম অভিজ্ঞ কৃষি বিষয়ক স্পেশালিস্ট। আমি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কৃষকদের বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ, পোকা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ, সঠিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমার লক্ষ্য হলো কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও খরচ কমিয়ে একটি টেকসই এবং লাভজনক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সমন্বয় করে আমি সবসময় কৃষকদের পাশে আছি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *