যখন আমাদের মাথায় খালি জমি বা পরিত্যক্ত জমির আগাছানাশক এর কথা মনে হয় তখন বেশ কিছু আগাছানাশকের নাম মাথায় আসে । বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে বিভিন্ন প্রকার আগাছানাশকের ছড়া ছড়ি কিন্তু সকল আগাছানাশক গুলি সমস্ত স্থান, কাল ও পরিবেশের উপরে ভিত্তিকরে ভিন্নভিন্ন রেজাল্ট দেয়। আজকর এই ব্লগে আমি আপনাদেরকে বলতে যাচ্ছি যে আপনি ফলের বাগান, গার্ডেন, পরিত্যক্ত জমি ও বাড়ির আঙিনার জন্য সব থেকে যে আগাছানাশক গুলি কার্যকর হবে।
পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির ইত্যাদির কার্যকর আগাছানাশক
পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির আগাছা দমনের জন্য ভালো কার্যকর হলো ৩ টি আগাছানাশক তা হলো
- প্যারাকোয়াট যেমনঃ ক্লীন কোয়াট ২৪ এসএল , লাকট ২০ এস এল ইত্যাদি।
- গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম ব্রশ যেমনঃ ব্রাশ ২০০ এস এল , পরশ ৩০ এস এল ইত্যাদি।
- গ্লাইফোসেট যেমনঃ রন্ডো ৭২ ডব্লিউডিজি রাউন্ড আপ ৪১ এস এল , লাইসেট ৪১ এস এল , ইরেজার ৪১ এস এল ইত্যাদি।
যদিও এই তিনটাই পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমিতে প্রয়োগের জন্য তবে কোনটা আপনার জন্য ভালো হবে সেগুলি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো
প্যারাকোয়াট ব্যবহার করে পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির আগাছা দমন
প্যারাকোয়াট বা প্যারাকোয়াট ডাইক্লোরাইড আগাছানাশক এটি ছোট ও বড়ো আগাছার উপর প্রয়োগ করলে এটি খুব দ্রুত আগাছাকে ঝলসিয়ে দেয় দেখে মনেহয় এটা পুড়ে গিয়েছে। এই প্যারাকোয়াট মূলত স্পর্শক আগাছানাশক যা উদ্ভিদের যেখানে এটি স্পর্শ করে উদ্ভিদের সেই স্থানটির অংশ মারা যায়। এই প্যারাকোয়াট কে বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্নভিন্ন নামে ডাকা হয় যেমনঃ পুড়া, বন মারা, বাচড়া পুড়া, ঘাস মারা তেল, তেল বিষ ইত্যাদি নাম। ভর দুপুর বা প্রচণ্ড রোদে প্যারাকোয়াট প্রয়োগ করলে মাত্র ৩০ মিনিটের ভিতর আগাছা গুলি মরে ঝলসিয়ে যাই মনেহয় স্থানটিতে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। তবে প্যারাকোয়াট ব্যবহারের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে এইগুলি বিবেচনা করা আপনি বাছাই করতে পারেন। নিচে প্যারাকোয়াট জাতী গাছানাশকের নাম দেওয়া হলো
- ক্লীন কোয়াট ২৪ এস এল
- লাকট ২০ এস এল - ফার্মকট ২০ এসএল
- বাংলা ওয়াশ ২০ এসএল ইত্যাদি
প্যারাকোয়াট ব্যবহারে যেসকল আগাছা দমন হয়
শ্যামা, বিরকিন্ন, দূর্বা, মুথা ও অন্যান্য সকল ছোট ও মাঝারি আকারের আগাছা।
প্যারাকোয়াট ব্যবহারের সুবিধা
- প্রয়োগের ৩০ মিনিটের ভিতর আগাছা দমন হতে থাকে।
- প্রয়োগের ৩০ মিনিট পর বৃষ্টি হলে তবুয়ও কিছুটা কাজ করে।
- অনেক সাচ্রইয়ী মূল্যে বাজারে কিনতে পারা যাই।
- সামান্য বড়ো ফল গাছ বা অন্যান্য গাছের যার উচ্চতা ৫ ফুট এর বেশি এই সব গাছের গোড়ায় প্যারাকোয়াট স্পর্শ করলে গাছের ক্ষতি হয় না।
প্যারাকোয়াট ব্যবহারের অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিক
- এটি প্রয়োগে দ্রুত আগাছা মরলেও আগাছাগুলির গোড়া থেকে দমন হয় না। প্রয়োগের ৭ দিন শেষ না হতে আবার আগাছাগুলি জন্মাতে থাকে। এটি দীর্ঘ দিন আগাছাদমনের জন্য ভালো কার্যকর নয়।
- এটি মাটিতে পড়লে মাটির অনুজীবগুলি এটিকে সহজে ডি-কম্পস্ট বা নষ্ট করতে পারে না এতে মাটি দূষণ হয়।
- এটি মানুষ বা প্রাণীর পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে অথবা কেউ শেবন করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। এর কোনো অ্যান্টিডোট নেই।
- অনেকে দাবি করেন যে প্যারাকোয়াট ব্যবহারে ক্যান্সার হয় কিন্তু এটি প্রামাণিত নয় যে ক্যানসার হয় কিন হয় না।
প্যারাকোয়াট হলো খুব দ্রুত আগাছা দমন করতে পারে কিন্তু দীর্ঘদিনের আগাছা দমনের জন্য এটি ভালো উপকারী হবে না
উপরে প্যারাকোয়াট প্রয়োগের সুবিধা অসুবিধা ও ক্ষতিকর দক আলোচনা করা হয়েছে নিচে গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম
গ্লাফোসেট এর বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করা হলো
গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম ব্যবহার করে পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির আগাছা দমন
গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম হলো আগাছা দমনের জন্য একটি আদর্শ আগাছানাশক। এটি প্রয়োগের ঠিক ১ ঘন্টা হতে হতে এর রেজাল্ট প্রকাশ হতে থাকে। কোনো ফল বাগান, বাড়ির আঙ্গিনা, লন বা রাস্তার আগাছা ভরা স্থানকে আগাছামুক্ত করতে সঠিক আগাছানাশক হলো গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম। গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম মূলত স্পর্শক আগাছানাশক হিসেবে ধরা হয় কিন্তু এর কিছুটা অন্তর্বাহী ক্ষমতা আছে। এটি স্পর্শক ও অন্তর্বাহী গুণের জন্য আগাছার উপর প্রয়োগে এটি আগাছার দেহের উপরিভাগ ও ভিতরের ভাগকে ধ্বংস করতে পারে। এতে সম্পূর্ণ আগাছা টি ২ দিনের ভিতর সম্পূর্ণভাবে মারা যাই। নিচে গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম যুক্ত আগাছানাশকের নাম দেওয়া হলো
- ব্রাশ ২০০ এস এল
- ফাগুন ৩০ এস এল
- পরশ ৩০ এস এল
- পিলার স্টার ২০ এস এল ইত্যাদি
গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম ব্যবহারে যেসকল আগাছা দমন হয়
শ্যামা, বিরকিন্ন, দূর্বা, মুথা ও অন্যান্য সকল ছোট ও মাঝারি আকারের আগাছা।
গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম ব্যবহারের সুবিধা
- গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম আগাছার বাহির ও ভিতর থেকে আক্রমণ করে আগাছাকে ধ্বংস করে।
- প্রয়োগের ২ ঘন্টা পর বৃষ্টী হলেও এটি অনেকটাই কার্যকর থাকে।
- প্রচণ্ড রোদে গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম খুবি কার্যকর।
- এটি প্রয়োগে ১০ দিনের বেশি দিন ধরে আগাছা দমন থাকে।
- এটি ব্যবহারে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। মাটির অনুজীবগুলি দ্রুত ও সহজেই এটাকে ডি কম্পষ্ট করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেই।
- এর মূল্য অতিরিক্ত নয় তবে প্যারাকোয়াটের থেকে লিটারী মিনিমাম ১০০ টাকার বেশি।
- এটি ব্যবহারে পশু ও মানব শরীরে স্পর্শ করলে তেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই। তবে গিলে খেলে সমস্যা হবে।
গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম ব্যবহারের অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিক
- গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম হলো একটি আদর্শ আগাছানাশক এর তেমন কোনো অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিক নেই।
উপরে প্যারাকোয়াট ও গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম প্রয়োগের সুবিধা অসুবিধা ও ক্ষতিকর দক আলোচনা করা হয়েছে নিচে গ্লাইফোসেট নিয়ে আলোচনা করা হলো
গ্লাইফোসেট ব্যবহার করে পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির আগাছা দমন
গ্লাইফোসেট আগাছানাশক ব্যবহার হয় মূলত দীর্হস্থায়ী আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য। গ্লাইফোসেট হলো একটি সম্পূর্ণ অন্তর্বাহী আগাছানাশক, মানে এটি প্রয়োগের আগাছার শিকড়, পাতা, কাণ্ড এর মাধ্যমে শোষিত হয়ে সম্পূর্ণ আগাছার দেহ ও শেকড়কে সম্পূর্ণ রূপে ধবংশ করে। এটি প্রয়োগ করে বড়ো বড়ো উদ্ভিদে যেমনঃ আম, মেহেগুনি, নারিকেল গাছের মতো গাছ দমন করা যাই। এই প্রভাবের কারণে আগাছাগুলি ২০ দিনের বেশি সময় ধরে দমন রত অস্থাই থাকে। এটি প্রয়োগের পর আগাছা দমন হতে ৩-৭ দিন সময় নেই। এটি ধিরে ধিরে আগাছা দমন করে। নিচে গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম যুক্ত আগাছানাশকের নাম দেওয়া হলো
- রন্ডো ৭০ ডব্লিউডিজি
- রাউন্ডআপ ৪১ এস এল
- লাইসেট ৪১ এস এল
- জিমিরাউন্ড ৪১ এস এল
- ইরেজার ৪১ এস এল
- জাহামা ৬২ এস এল ইত্যাদি
গ্লাইফোসেট ব্যবহারে যেসকল আগাছা দমন হয়
বড়ো ছোট মাঝারি সকল প্রকার উদ্ভিদ ও আগাছা দমন হয়।
গ্লাইফোসেট ব্যবহারের সুবিধা
- গ্লাইফোসেট প্রয়োগে আগাছার গোড়া ও শিকড় সম্পুর্ণ রূপে ধ্বংস হয়।
- এটি প্রয়োগে অনেক দিন আগাছা নিয়ন্ত্রণ যা দীর্হস্থায়ী আগাছা দমনের জন্য খুবি প্রয়োজন
- এটি প্রয়োগে ২৫ দিন পর্যন্ত আগাছা দমন থাকতে পারে।
গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম ব্যবহারের অসুবিধা বা ক্ষতিকর দিক
- এটি প্রয়োগের পর ১২ ঘণ্টার ভিতর বৃষ্টি হলে গ্লাইফোসেট রেজাল্ট পাওয়া যাবে না। তাই বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে এটি তেমন ব্যবহার যোগ্য নই
- অতিরিক্ত খরা মৌসুম, গাছের গোড়ায় কোনো রস নেই, অতিরিক্ত তাপমাত্রাই আগাছা ও গাছের উপর গ্লাইফোসেট করলে রেজাল্ট পাওয়া যাই না।
- অন্যান্য আগাছানাশক থেকে এর মূল্য একটু বেশি।
- মাটিতে প্রয়োগ করলে মাটি অনুজীব গুল্লি এটিকে সহজে ডি-কম্পস্ট করতে পারে না। এতে মাটি দূষিত হয়।
- গ্লাইফোসেট ব্যবহারে ক্যানস্যারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যদিও এটার কারণে ক্যানসার হয় এটি প্রামাণিত নয়।
আপনি কোন আগাছানাশক টি বেছে নিবে ??
উপরে পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির আগাছা দমনের সব থেকে কার্যকর আগাছানাশক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি আপনার চাহিদা অনুযায়ী কোনটা ভালো হবে তা বেছেনিতে পারেন। এখানে যে সকল আগাছানাশক উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্য সকল পরিবেশে জন্য ভালো কার্যকর আগাছানাশক হলো গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম যুক্ত আগাছানাশক, যেমনঃ
- ফাগুন ৩০ এস এল (সুইট এগ্রোভেট লিঃ)
- পরশ ২০ এস এল ইত্যাদি (গ্রীন বাংলা এগ্রোভেট লিঃ)
- ব্রাশ ২০০ এস এল (ক্লীন এগ্রো)
- পিলার স্টার ২০ এসএল (নাফকো কর্পোঃ)
শেষ কথা
পরিত্যক্ত জমি, বাড়ির আঙিনা, খালি জমির আগাছা দমনের সম্পর্কে আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান ইনশাল্লাহ আমরা আপনার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব। পোস্টটি ভালো লাগবে অবশ্যই আমাকে ফলো করতে ভুলবেন না।
Thank you.. Regards Rubai Hussain, Thank you very much for being with Kajhobe.com


